ফ্রীল্যান্সিং ইদানিং একটা খুবই আলোচিত বিষয়, বিশেষ করে যারা টেকনিকাল লাইনে কাজ করতে চান। প্রথমেই বলে নেই আমি ২০০৯ থেকে এই পেশার সাথে জরিত এবং এখনও পুরদমেই কাজ করে যাচ্ছি। তবে সবার আগে বলে রাখা ভাল যারা এই পেশায় নিজেকে জড়াতে চান, দয়া করে ধৈর্য্য ধারণ করার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। আমার কাছে অনেকেই বিড করার টিপসের জন্য অনুরোধ করেন, আমি সাধ্য মত সাহায্য করার চেষ্টা করি। একজন ডেভেলপারের উদাহারন দেই, অনেকদিন থেকে সে আমার কাছে টিপস চাচ্ছিল কিন্তু সময় করতে পারছিলাম না কোনভাবেই, একদিন সময় করে বসলাম তার সাথে স্কাইপ-য়ে। আমার যত অভিজ্যতা সব তাকে ধেলে দিলাম, কিছুটা অপরাধবোধ ছিল বলে একটু বেশী টিপস দিলাম। সে খুব খুশি অনেক টিপস পেয়ে, আর আমারও ভাল লাগলো তাকে সময় দিতে পেরে। দুই দিন পার হতে না হতেই আবার আমাকে নক করল স্কাইপ-য়ে, সে আমাকে যা বলল তাতে বিরক্ত না হয়ে পারলাম না। সে বল্ল ভাই এখনো কোন রিপ্লাই পেলাম না, আমাকে দিয়ে বিড হবে না, আমাকে কাজ দেন আমি কাজ করি। তাকে দিয়ে এই কাজ হবে না বুঝে গেলাম। ধৈর্য্যর কথাটা এই জন্য বললাম। মাস এর পর মাস কষ্ট করতে হবে একটা কাজ পেতে, হয়ত আরও বেশী সময়।
যারা সত্যিই এই পেশায় নিজেকে জড়াতে চান তাদের জন্য কিছু টিপস, আসা করি কাজে আসবে।
১। প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে এই কাজ এর জন্য তৈরী করা। যেই কাজে নিজেকে পারদর্শী মনে করেন শুধু বেছে বেছে ওই কাজ গুলোতেই বিড করবেন। হরে দরে সব কাজে বিড করবেন না প্লিজ।
২। কাজের বিবরন ভালভাবে পড়বেন। সবার প্রথমে বিড করা বা উপরের দিকে থাকার জন্য তাড়াহুড়া করে বিড করার কোন দরকার দেখি না আমি।
৩। ক্লায়েনট কি চাচ্ছে তা বোঝার পর, আপনি যা বুজতে পারলেন তাই আপনার আবেদনপত্রে লিখুন, ক্লায়েনটকে প্রশ্ন করুন বিনা সঙ্কোচে। একটা কথা মনে রাকবেন প্রশ্নটা যেন প্রাসঙ্গিক হয়। ক্লায়েনটকে কখনো এই প্রশ্ন করা উচিৎ না যে আপনি কি সি,এম,এস ব্যবহার করতে চান? বরং আপনার যদি মনে হয় ক্লায়েনট টেকনিক্যাল না তাহলে আপনি তাকে পরামশ দিতে পারেন এবং সেটার পিছনে যুক্তি দেখান কেন এইটা ক্লায়েনটয়ের ব্যবহার করা উচিৎ।
৪। এরপর আসছে কাজের উদাহারন, মানে হচ্ছে আপনি যেই কাজ গুলা আগে করেছেন তা ক্লায়েনটকে দেখানো। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী, ধরেন ক্লায়েনটের কাজ হচ্ছে একটি হোটেলের ওয়েবসাইট বানাবে, আপনি এখানে অন্য একটি কাজের উদাহারন দিলেন, যেটা হোটেল ব্যাবসার সাথে কোন সম্পক নেই। ক্লায়েনটয়ের রিপ্লাই পাওয়ার সম্ভাবনা এখানে শূন্য। চেষ্টা করবেন একই ধরনের কাজের উদাহরন দিতে।
৫। আপনার প্রপসালে (আবেদনপত্রে) দয়া করে কাজের অনেক বড় লিস্ট দিবেন না। প্রাসঙ্গিক ৩ টার বেশী লিঙ্ক দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ক্লায়েনট প্রথম ২/৩ টার বেশী দেখবে না কখনোই।
৬। চেষ্টা করবেন আপনার লিখাটা যেন ছোট হয়। ৫/৬ লাইনের বেশী না হওয়াই ভাল। আপনি কি পারেন সেইটার ফিরিস্তি দিয়ে কোন লাভ হবে না। টেকনিকাল কথা বেশী বলার চেষ্টা করবেন, অবশ্যই প্রাসঙ্গিক।
৭। আমি জানি যে একটা প্রজেক্টয়ে অনেক বিড পরে, ক্লায়েনট হয়ত প্রথম একটা লাইনই পড়ে। যদি তার ১ম লাইন ভাল লাগে বা মনে করে এই আবেদনপত্রটি ভাল তাহলেই একমাত্র সে আপনার আবেদনপত্রে আরও সময় দিবে, নতুবা আর দেখবেই না। সুতরাং ১ম লাইন থেকেই আপনার কাজের কথা শুরু করা উচিৎ, এমন কিছু বলেন যেন ক্লায়েনট বাধ্য হয় আপনার পুরা আবেদনপত্রটি পড়তে।
৮। সম্ভব হলে ক্লায়েনটকে বলেন তার কাজটা নিয়ে আপনি কিভাবে এগোতে চাচ্ছেন, এতে ক্লায়েনট বুজবে যে আপনি তার লিখাটা গুরুত্ব দিয়ে পড়েছেন এবং তার কাজ টা দায়িত্ব নিয়ে করবেন।
৯। ক্লায়েনটরা এখন চায় একজন বিশ্বস্ত ফ্রীল্যান্সার যে তার কাজটা দায়িত্ব নিয়ে এবং সময়মত করে দিবে। আপনাকে শুধু এটুকুই বঝাতে হবে যে আপনি কাজটার ব্যাপারে আগ্রহী এবং সময়মত করে দিতে পারবেন।
১০। আপনি এখন পর্যন্ত কতগুলা কাজ করেছেন, আপনার কত বছরের অভিজ্ঞতা, মার্কেটপ্লেসে আপনার রেটিং কত, এইসব এক লাইনে লিখতে পারেন। কিন্তু প্লিজ এইটা কখনো বলবেন না যে আমি এক্সপার্ট আমাকে কাজ দাও। আপনি এক্সপার্ট কিনা সেটা সে আপনার কোথাতেই বুঝে নিবে আর কাজ দেয়া না দেয়াটা টার নিজস্ব ব্যাপার।
সত্যি কথা বলতে কি, আমি আমার কাজটা ভালবাসি, এখনো কোন নতুন কাজ পেলে আমার প্রথম কাজ পাওয়ার যে অনুভুতি হয়েছিল সেই অনুভুতিই হয়। এই কাজটাতে একটা নেশা আছে, নতুন কাজ পাওয়া, নতুন নতুন ক্লায়েনটএর সাথে পরিচিত হওয়া, তাদের সাথে কথা বলা, আমাকে এখনো টানে। জানিনা এইটা কতদিন থাকবে। বন্ধুরা কাজটাকে ভালবেসে করেন সাফল্য অবশ্যই আসবে। আমরা জোর করে তো ক্লায়েনট থেকে কাজ নিতে পারবনা, আমরা মন থেকে চেষ্টা করতে পারি।
আজকে এই পর্যন্তই থাক আমি আরও টিপস নিয়ে আসব পরের লিখাতে। সবাই অনেক ভাল থাকবেন আর অনেক কাজ করবেন, এতে নিজের লাভ তো আছেই সেই সাথে দেশের ও লাভ।
0 comments:
Post a Comment